ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটের (ব্লক-২) বৈধতার কথা বলে টাকা নেওয়ার অভিযোগে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মার্কেট সমিতির নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলু। তবে এ জন্য সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন দায়ী করেছেন বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসকে।
- Advertisement -
মামলাটি প্রসঙ্গে সাঈদ খোকন বলেন, সবাই বলেন বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দেলোয়ার হোসেন দেলুকে দিয়ে এসব নোংরামি করাচ্ছেন। এতে তার ও দলের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। সাঈদ খোকনের জনসংযোগ কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম সুমনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের এ ধরনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তার মাধ্যমে মেয়র তাপসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে এর আগে তিনি গণমাধ্যমে এসব অবৈধ দোকানের পেছনে বিপুল অর্থ বাণিজ্যের ইঙ্গিত দিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন।
গত মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটের বৈধতার কথা বলে টাকা নেওয়ার অভিযোগে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলামের আদালতে মামলার আবেদন করেন মার্কেটের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলু।
তাতে তিনি অভিযোগ করেন, রাজধানীর ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটে (ব্লক-২) দোকানের বৈধতার কথা বলে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন টাকা নিয়েছেন। মামলায় তিনি আরও ৭ জনের নাম উল্লেখ করেন।
প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত মামলাটি আদেশের জন্য রেখেছিলেন একই আদালত। মামলায় সাঈদ খোকন ছাড়া যে সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন- ডিএসসিসির সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাজেদ, কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, তৎকালীন মেয়রসহ অন্য আসামিরা দোকান বরাদ্দের কথা বলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করে মোট ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৫৭৫ টাকা বেনামে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে গ্রহণ করেন। বাদী এ লেনদেনে বাধা দেওয়ায় আসামিরা তাকে প্রাণহানির চেষ্টা করেন। আসামিরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন কিন্তু কোনো দলিলাদি দেননি।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৪/১০৯/১২০(খ)/৪০৬/৪১৭/৪৬৮/৪৭৭ (ক)/৫০৬ ধারায় অর্থ আত্মসাৎ ও অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গসহ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয় এবং আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়।
ফুলবাড়ীয়া সুপার মার্কেট-২ এর নকশা বহির্ভূত ৯১১টি দোকান চিহ্নিত করে গত ৮ ডিসেম্বর তা ভাঙতে অভিযান শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা জানান, দোকানের বৈধতা পেতে সাঈদ খোকন মেয়র থাকার সময়ে দোকান প্রতি পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন তারা। অনেক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, টাকা দেওয়ার পরও সে সময় দোকানের বৈধতা পাননি তারা।
কর্মকর্তারা জানান, ডিএসসিসির খাতায় থাকা ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২-এর ব্লক-এ, বি, সি নামের তিনটি মার্কেটে তিলধারণের জায়গা ফাঁকা নেই। ফুটপাত, মার্কেটের গলি, সিঁড়ির স্থান, লিফটের জায়গা, পার্কিং স্পেস, মার্কেটের পেছনের অংশ, এমনকি বাথরুমের জায়গাও ভেঙে দোকান বসানো হয়েছে। ১৯৯৭ সালে ফুলবাড়িয়া মিউনিসিপ্যাল সুপার মার্কেটের ‘এ’ ব্লকে বেজমেন্টে ব্যবসায়ী সমিতির ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের মাঝে ১৭৬ জনকে টোলের বিনিময়ে অস্থায়ীভাবে ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হয়। একই বছরে বেজমেন্টের ‘বি’ ব্লকে ১৭৬ ও ‘সি’ ব্লকে ১৭৬ জনকে অস্থায়ী ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
মার্কেটের ‘এ’ ব্লকের নিচতলায় ১৯৯৪ ও ২০০৬ সালে মোট ৯৮ জনকে, মার্কেটের ‘বি’ ব্লকে ১১৭ জনকে ও ‘সি’ ব্লকে ১৭২টি দোকান সালামির মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০০৬ সালে মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ‘এ’ ব্লকে ১৫৭টি, ‘বি’ ব্লকে ১৭৮টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মার্কেটের তৃতীয় তলায় ‘এ’ ব্লকে ১৫৭টি ও ‘বি’ ব্লকে ১৭৮টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ মার্কেটের চতুর্থ তলায় ‘এ’ ব্লকে ১০০টি দোকান ২০০৬ সালে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বরাদ্দবিহীন রয়েছে ‘এ’ ব্লকের পঞ্চম তলায় ১০০টি, ‘বি’ ব্লকের চতুর্থ তলায় ১০০টি, পঞ্চম তলায় ৯৯টি, ‘সি’ ব্লকের দ্বিতীয় তলায় ৯৪টি, তৃতীয় তলায় ৯৪টি, চতুর্থ তলায় ৯৪টি দোকান। এর মধ্যে সম্পূর্ণ তৈরি অবস্থায় রয়েছে ২৮২টি দোকান, যা কর্পোরেশন নির্মাণ করেছে। মোট ২ হাজার ৫৪৮টি দোকান রয়েছে।
এগুলো বর্তমানে ভাড়া ও বিক্রিসহ সব নিয়ন্ত্রণ মার্কেট সমিতির কাছে থাকলেও মেয়র তাপস দায়িত্ব নেওয়ার পর দৃশ্যপট বদলে যায়। তিনি মার্কেটের সামনে ও বিভিন্ন তলায় থাকা অবৈধ দোকান উচ্ছেদে জোর তৎপরতা শুরু করে। এ উচ্ছেদ কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার পর বর্তমান মেয়র তাপস ও সাবেক মেয়র খোকন পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিতে শুরু করেন।
একপর্যায়ে গতকাল মার্কেটটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলু সাবেক মেয়র খোকনের নামে আদালতে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে মামলার আবেদনের পর বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে।
Leave a Reply