করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় বেড়েছে। টিকা কেনাসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খরচ হচ্ছে।
আগামীতে এ ব্যয় আরও বাড়বে। অপরদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থবিরতার কারণে কাঙ্ক্ষিত হারে অর্জন হচ্ছে না রাজস্ব। ফলে আয় না বাড়লেও ব্যয় বেড়েই চলেছে।
- Advertisement -
এতে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে আর্থিক ব্যবস্থাপনা। এমন পরিস্থিতিতে নতুন বছরে ব্যয় মেটাতে টাকা জোগাড়ের দিকেই সরকারের নজর থাকবে বেশি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনিবআর) হিসেবে গত জুলাই থেকে নভেম্বর এই পাঁচ মাসের রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমছে ২৫ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা। রফতানি প্রবৃদ্ধি কমেছে ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ, টাকার অঙ্কে ২২৮ কোটি মার্কিন ডলার এবং আমদানি ব্যয় কমেছে ১২৩ কোটি ডলার। এ অবস্থায় শুরু হয়েছে নতুন একটি বছর। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারের চ্যালেঞ্জ ভিন্ন। এর প্রধান হচ্ছে টাকা জোগাড় করা। এজন্য বৈদেশিক উৎস থেকে টাকা সংগ্রহে সরকারকে বেশি জোর দিতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, এ পর্যন্ত ২০৩ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা পেয়েছে সরকার। নতুন করে আরও সহায়তা পাওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চলছে। এসব অর্থ ব্যয় হচ্ছে সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে। সরকার ঘোষিত ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়ন করার তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। কারণ এই অর্থ প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পৌঁছলে শিল্পের চাকা আরও গতি পাবে।
এসএমই ও রফতানি খাত চাঙ্গা হবে। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে। বাড়বে শিল্পের উৎপাদনও। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রণোদনা প্যাকেজ ঋণের অর্ধেক এখন ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পৌঁছেনি। নতুন বছরের অর্থনীতি নিয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, অর্থনীতি ঠিক জায়গায় আছে, ভালো অবস্থানে আছে। আমাদের অর্থনীতি অনেক অনেক বেশি ভালো অবস্থানে। যেটা কেউ চিন্তা করতে পারেনি। আমরা বিশ্বাস করি এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’
করোনাভাইরাসের কারণে গেল বছর মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত কর্মহীন হয়ে পড়েছে ৩ কোটি ৫৯ লাখ মানুষ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে ৩ শতাংশ। করোনা মোাকাবেলায় ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন সরকার।
এতে বড় ধরনের ধস নামে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের উৎপাদনে। ফলে গেল অর্থবছরের শেষ তিন মাস (এপ্রিল-জুন) এই বিপর্যয়ের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি। অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ।
যা ২০০৮ সালের পর জিডিপিতে এত বড় আঘাত আর আসেনি। তবে জুলাই থেকে পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হতে থাকে। কিন্তু নভেম্বর থেকে শুরু হয় দ্বিতীয় ঢেউ।’ ফলে অর্থনীতিতে ফের অশনি সঙ্কেত বিরাজ করছে।
এরই মধ্যে দেশের প্রধান রফতানি আয়ের খাত পোশাক শিল্পে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব পড়েছে। বিজিএমইএর হিসাবে এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রফতানি কমেছে ৮ শতাংশ। জার্মানিতে কমেছে ১০ শতাংশ। স্পেনে ৬ শতাংশ, ফ্রান্সে ১৫ শতাংশ, ইতালিতে ৩০ শতাংশ ও জাপানে ২৮ শতাংশ কমেছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের ভেতর টিকার কার্যক্রম শুরু হলে ভীতি দূর হয়ে সব ধরনের কর্মকাণ্ডে আরও সম্পৃক্ততা বাড়বে মানুষের। আর প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পৌঁছলে অর্থনীতির গতি ফিরবে।
এমন মূল্যায়নের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ। তিনি বলেন, নতুন বছরে রাজস্ব আহরণই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। এরই মধ্যে করোনার টিকা চলে আসবে। টিকাসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় বাড়বে। এর সঙ্গে সংযুক্ত রেখে রাজস্ব আহরণ কম হবে।
তিনি বলেন, বৈদেশিক খাত থেকে গত বছর ভালো সাড়া পাওয়া গেলেও নতুন বছরের কতটা পাওয়া যাবে সেটি নিশ্চিত নয়। তবে রফতানি ও রেমিটেন্স খাতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দিয়ে কিছুটা রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করা যাবে। তবে বৈদেশিক উৎস থেকে টাকা সংগ্রহে বেশি জোর দিতে হবে সরকারকে।
সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলেছে, করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি ও পুনরুদ্ধারে তিনটি প্রধান উদীয়মান চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে বৈষম্য হ্রাস ও সামাজিক গতিশীলতা বাড়াতে অর্থনৈতিক নীতিগুলো পুনর্বিবেচনা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন উৎস চিহ্নিত এবং অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা বাড়াতে নতুন লক্ষ্যের ওপর মনোযোগ দেওয়া।
বিআইডিএস’র সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এমকে মুজেরি বলেন, টিকা সংগ্রহও হবে একটি চ্যালেঞ্জ। কারণ মানবদেহে টিকা দেওয়া হলে আত্মশক্তি বাড়বে।
অর্থনীতির কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ আরও জড়িয়ে পড়বে। এতে উন্নয়ন কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিধারায় ফিরে আসবে।
Leave a Reply