বরিশালে কারা হেফাজতে রেজাউল করিম রেজা (৩০) নামে আইন মহাবিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটের দিকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। কারাগারে পাঠানোর আগে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে নির্যাতন করে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনেরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। এ সময় অভিযুক্ত এসআইয়ের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। তবে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। জানা গেছে, নিহত রেজাউল নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান সড়কের বাসিন্দা এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী ইউনুছ মুন্সীর ছেলে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন মাহি গত মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে বাসার সামনে থেকে রেজাউলকে আটক করেন। পরে রাত ১২টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানায় ১৩৬ গ্রাম গাঁজা ও চার অ্যাম্পুল নেশাজাতীয় ইনজেকশন উদ্ধার দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
- Advertisement -
বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, গত বুধবার রেজাউল করিম রেজাকে কারাগারে গ্রহণ করা হয়। সেখানে তার ফরওয়ার্ডিং কাগজে অসুস্থতার কথা উল্লেখ থাকায় এবং পা থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ায় কারাগারের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত শুক্রবার তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ হরে কৃষ্ণ সিকদার জানান, রক্তক্ষরণজনিত কারণে শুক্রবার রাত ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে পুরুষ সার্জারি-১ ইউনিটে রেজাউলকে ভর্তি করে কারা কর্তৃপক্ষ। সেখানে চিকিত্সাধীন অবস্থায় পরদিন রাতে তিনি মারা যান।
লাশ নিয়ে বিক্ষোভ-ভাঙচুর
এদিকে মহিউদ্দিন মাহিসহ ‘নির্যাতনকারী’ পুলিশ সদস্যদের বিচারের দাবিতে গতকাল রবিবার বিকেলে সাগরদী এলাকায় ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে রেজাউলের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। প্রায় দুই ঘণ্টা এই বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে কয়েক শ যানবাহন আটকা পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনারসহ (দক্ষিণ) অন্যরা তাদের বিচারের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেন। পরে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ধান গবেষণা এলাকায় গিয়ে এসআই মহিউদ্দিন মাহির বাসভবনে ভাঙচুর চালান আন্দোলনকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
নিহতের ফুপা তাকের মিয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঘটনার রাতে এসআই মহিউদ্দিন মাহি রেজাউলকে রাস্তায় আটকে দুই জন মাদক ব্যবসায়ীর খোঁজ জানতে চান। এ সময় রেজাউল কিছু জানেন না বলে জানালে এসআই মহিউদ্দিন নিজের গাড়ির কাছে গিয়ে আবার ফিরে এসে রেজাউলের পকেটে হাত দিয়ে নেশাজাতীয় ইনজেকশন পান বলে জানান এবং তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যান।
রেজাউলের পিতা ইউনুছ মুন্সী জানান, তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর শুক্রবার রাত ৯টার দিকে পুলিশ ফোন করে জানায় রেজাউল বাথরুমে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। তার পায়ে ব্লিডিং হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে রেজাউলের সঙ্গে পরিবারের কাউকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। তার ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে দাবি করে তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়েছেন।
ঘটনা সম্পর্কে অভিযুক্ত এসআই মহিউদ্দিন মাহি জানান, রেজাউলকে গাঁজা ও নেশাজাতীয় ইনজেকশনসহ গ্রেফতার করা হয়। পরদিন তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে সুস্থ অবস্থায়। এছাড়া রেজাউলের বিরুদ্ধে আগেও মাদক মামলা ছিল বলে তিনি জানান।
পুলিশের ব্যাখ্যা, তদন্ত কমিটি
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বরিশাল মেট্রোপলিন পুলিশের পক্ষ থেকে ই-মেইল বার্তায় ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সে (নিহত রেজাউল) পূর্ব থেকেই এলাকায় মাদকবিক্রেতা ও মাদকসেবী হিসেবে চিহ্নিত ছিল এবং ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে মাদকসংক্রান্ত একাধিক মামলা হয়েছিল। তার শরীরের বাম পায়ের কুঁচকিতে ক্ষত ছিল। ১ জানুয়ারি ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হলে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে চিকিত্সার জন্য শেবাচিম হাসপাতালে পাঠায়। পুলিশের পক্ষ থেকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো কিছুই করা হয়নি। প্রাথমিক অনুসন্ধানে পুলিশি নির্যাতনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। শরীরের ক্ষতস্থান থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে হূদেরাগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এর পরেও বিষয়টি তদন্তের জন্য উপ-পুলিশ কমিশনারকে (দক্ষিণ) প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি) কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান সাংবাদিকদের জানান, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
Leave a Reply