বিশ্বজুড়ে আলোচনার ঝড় তুলেছে সিনেমাঘরে গেল ১৭ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া দক্ষিণী সুপারস্টার আল্লু অর্জুনের নতুন সিনেমা ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’। মুক্তির পর থেকে সিনেমাটি বক্স অফিসে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে। কোনো রকম গ্ল্যামার ছাড়াই এই ছবিতে নিজের অভিনয় ও চরিত্র দিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন আল্লু অর্জুন। সিনেমায় আছেন আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাশ্মিকা মান্দানা। সিনেমাটির গল্প আবর্তিত হয়েছে বিখ্যাত রক্তচন্দন গাছ এবং এই গাছের কাঠ নিয়ে। তাই পুষ্পা’র বিরাট সাফল্যে আলোচনার তুঙ্গে উঠে এসেছে সিনেমাটির প্রধান উপাদান রক্তচন্দন কাঠ। যে রক্তচন্দন পাচার নিয়ে সিনেমাটির কাহিনী লেখা হয়েছে, সেই কাঠের এত চাহিদা কেন? এই কাঠের বিশেষত্বই বা কী?-এই নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
রক্তচন্দন গাছ
পুষ্পা একটি সাধারণ কাহিনী মনে হলেও আসলে এটা কিন্তু অনেকটা সত্য ঘটনার উপরে নির্মিত। সিনেমাটির গল্প যে অঞ্চলকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে, সেখানে রক্তচন্দনকে ‘লাল সোনা’ বলা হয়। সোনার মতোই মূল্যবান এই গাছ। এই গাছ খুবই বিরল প্রজাতির। ‘পুষ্পা’ ছবিতে যে জঙ্গলের কথা বলা হয়েছে রক্তচন্দন সে ঘন জঙ্গলের পাহাড়ে পাওয়া যায়। জঙ্গলটির নাম ‘শেষাচলম’। তামিলনাড়ু লাগোয়া অন্ধ্রপ্রদেশের চার জেলা— নেল্লোর, কুর্নুল, চিতোর এবং কাডাপ্পা জেলাতে এই গাছের দেখা মেলে। এক একটি গাছের উচ্চতা ৮-১২ মিটার। জঙ্গলগুলোতে প্রধানত দুই ধরনের চন্দনকাঠ পাওয়া যায়। সাদা এবং লাল।
সাদা চন্দনের সুগন্ধ থাকলেও লাল বা রক্তচন্দনের নেই কোনো গন্ধ। কিন্তু এই কাঠের বিশেষ গুণের জন্যই বিশ্বজুড়ে এর বিপুল চাহিদা। আর সেই চাহিদার কারণেই এই কাঠ পাচার করা হয়। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (আইইউসিএন) ২০১৮ সালে এই গাছকে ‘প্রায় বিলুপ্ত’ শ্রেণির তালিকাভুক্ত করেছে। এই কাঠ এত বিপুল পরিমাণে কাটা এবং পাচার হয়েছে যে, আর মাত্র পাঁচ শতাংশ গাছ অবশিষ্ট আছে বলে জানা যায়।
কেন এত চাহিদা এই কাঠের?
আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে এই কাঠের বিপুল ব্যবহার হয়। হজম, ডায়েরিয়াসহ অসংখ্য রোগের চিকিৎসায় এই কাঠ ব্যবহার করা হয়। এই কাঠে রয়েছে রক্ত শুদ্ধিকরণের গুণ। ওষুধি গুণ ছাড়াও মদ তৈরিতে এই কাঠের বিপুল চাহিদা রয়েছে। এছাড়া পূজা-আর্চা, প্রসাধনী দ্রব্য তৈরিতেও এই কাঠ ব্যবহার করা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে এই কাঠের মূল্য কেজি প্রতি ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই গাছ কাটা নিষিদ্ধ করা হলেও এখনো থামানো যায়নি রক্তচন্দন পাচার। রক্তচন্দনের পাচার রোধে রাজ্য সরকার ‘রেড স্যান্ডলার্স অ্যান্টি-স্মাগলিং টাস্ক ফোর্স’ গঠন করে। এই সংস্থা গেল বছর (২০২১ সাল) মোট ৫০৮ কোটি টাকার রক্তচন্দন বাজেয়াপ্ত করেছে করেছে বলে জানা যায়। আর অভিযানে পাচারের সাথে জড়িত থাকা ৩৪২ জন পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে, মুলত চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই কাঠের বিপুল চাহিদা। তবে এই কাঠের সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে চীনে। তাই চীনেই এই কাঠের পাচার বেশি। চীনে ঘরের আসবাবপত্র, ঘরসজ্জা এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে এই কাঠের চাহিদা খুব বেশী। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
Leave a Reply